এসএসসির সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েও কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি ৮ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া আবেদন করেও কোনো কলেজে মনোনয়ন পায়নি ৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো— ১৯২টি কলেজ-মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীর আবেদনই পড়েনি। অন্যদিকে ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী কোনো কলেজে আবেদনই করেনি।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রথম ধাপে কলেজে ভর্তি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যোগ্য শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৭ জন শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিশ্চায়নের সুযোগ পাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে নিশ্চায়ন না করলে ফল বাতিল হয়ে যাবে। পরে নতুন করে আবার তাদের আবেদন করতে হবে।
এছাড়া, নামে মাত্র শিক্ষার্থী পেয়েছে পাঁচ শতাধিক কলেজ। কোনো কলেজে ২০০টি আসন থাকলেও ভর্তি আবেদন পড়েছে মাত্র ৫ থেকে ২০টি। এমন কলেজের সংখ্যাও দুই শতাধিক। যেসব শিক্ষার্থী আবেদন করেছে, তারাও যে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নিশ্চায়ন করবে সেটিও বলা যাচ্ছে না। ভর্তির কার্যক্রম শেষ হলে এমন কলেজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এদিকে, জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কলেজ না পাওয়ায় বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে এমন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ভর্তির আবেদনে কলেজ পছন্দের ক্ষেত্রে সংযুক্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া এবং প্রথম সারির কলেজ বেশি পছন্দ দেওয়া। কলেজ না পাওয়ার সংখ্যায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বেশি।
ভর্তিতে কোনো আসন সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আবেদন করে কলেজ পেয়ে যাবে বলে।
যে কারণে কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ১০টি কলেজ পছন্দ দিতে পারেন। কিন্তু সে ৫টি কলেজ পছন্দ দিয়েছেন। তার মধ্যে হয়ত ৩টি দিয়েছে সেখানে স্কুল অ্যান্ড কলেজ একসঙ্গে রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। যেমন ভিকারুননিসা বা আইডিয়াল স্কুল এবং রেসিডিয়ান স্কুলে নিজেদের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর পর হয়ত এক থেকে দেড়শ আসন থাকে। কিন্তু এর বিপরীতে আবেদন পড়ে কয়েক হাজার... কখনো তা লাখও ছাড়িয়ে যায়। সাধারণত এসব কলেজে জিপিএ-৫ ধারীরাই বেশি আবেদন করে। এজন্য জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তির জন্য মনোনয়ন পায়নি অনেক শিক্ষার্থী। তবে তাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। দ্বিতীয় দফায় কলেজ পছন্দের ক্ষেত্রে আরও সতর্কভাবে আবেদন করলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যারা কলেজ পায়নি তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আবেদনের সুযোগ পাবে। তবে তখন কলেজ পছন্দের ক্ষেত্রে তারা যেন নিজের নম্বর এবং কলেজের অবস্থান এসব বিষয় দেখে আবেদন করে। তাদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই, তারাও কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, জিপিএ–৫ পেয়েও যারা কলেজ পায়নি তাদের বেশিরভাগই সর্বোচ্চ ৫টি কলেজ পছন্দ দিয়েছে। অথচ সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দ দেওয়ার সুযোগ ছিল। এই ৫টির মধ্যে ভালো এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংযুক্ত কলেজকে পছন্দের তালিকায় রেখেছে। সে সর্বোচ্চ সংখ্যক কলেজ পছন্দ দিলে এ সংখ্যা এত হতো না।
১৯২টি কলেজ-মাদ্রাসায় কোনো আবেদনই পড়েনি
প্রতি বছরের মতো এবারও ১৯২টি কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য কোনো শিক্ষার্থীর আবেদনই পড়েনি। এসব প্রতিষ্ঠানকে পছন্দের তালিকায় রাখেনি শিক্ষার্থীরা। ন্যূনতম একজন শিক্ষার্থীও ওইসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেনি।
গত বছর এসএসসি ও সমমানের জন্য সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০৪টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীও আবেদন করেনি।
এসব কলেজের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে— জানতে চাইলে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সংখ্যা আরও কমতে পারে। তবে যেসব কলেজে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রথমে কারণ জানতে চাওয়া হয়। এরপর তাদের জবাব সন্তোষজনক না হলে কলেজের স্বীকৃতি বাতিল করা হয়।
প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী
প্রথম ধাপে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেও সুযোগ পাননি ৪৫ হাজার ১৮৩ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। যদিও দ্বিতীয় ধাপে পুনরায় আবেদনের সুযোগ পাবে তারা।
আগামী ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন নিশ্চায়নের সুযোগ পাবে প্রথম ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা। আর যেসব শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কলেজে ভর্তির আবেদন করেনি বা আবেদন করেও কলেজ পায়নি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আবেদন করতে পারবে তারা।
কলেজে ভর্তির আবেদনই করেনি ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও কলেজ ভর্তির জন্য আবেদন করেনি তিন লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী। আবেদন না করার বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তবে এই সংখ্যার মধ্যে অনেকেই কারিগরিসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্স করবে, যে বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের কাছে কোনো তথ্য নেই।
জানা গেছে, আগস্ট মাসে প্রকাশিত এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কলেজে ভর্তির আবেদন করেছে ১৩ লাখ ৭ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কলেজে ভর্তির জন্য কলেজ নির্বাচন করেছে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৭ জন। অর্থাৎ এসএসসি পাস করার পরও কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেনি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৩ জন।
অন্যদিকে ২০২১ সালে জেএসসি পাস করে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে এসএসসি পরীক্ষায় বসেনি ৫ লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝরে গেল এই শিক্ষার্থীরা। ফলে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় পাস করার আগেই তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীই ঝরে পড়ছে।
প্রথম ধাপে নিশ্চায়ন চলবে রোববার পর্যন্ত
নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আগামী ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং চার্জ বাদে রেজিস্ট্রেশন ফির ৩৩৫ টাকা জমা দিয়ে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন সম্পন্ন করতে হবে। মাইগ্রেশনপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির তারিখ ২৬ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন গ্রহণ করা হবে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর এবং ফল প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। প্রথম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন নিশ্চায়নের সুযোগ পাবে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিতরা। আর ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ফল প্রকাশ করা হবে। ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপের নির্বাচন নিশ্চায়ন চলবে। আর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলবে। ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর।